কঠিন পরিশ্রমের সাফল্য ( লেখকঃ- আল- আমিন)
শীতের সকাল, রোদে বসে আছি রাজু, রিয়াজ, আর ছোট বোন রিমু। ভাই বোন দের মধ্যে রিমু একটু জেদি মেয়ে যখন যা চাই তখন তা দিতে হয়। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সব থেকে বড়। বাবা বেসরকারি অফিসে চাকুরি করে যা মাইনে পান তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। মা বাড়ির কাজ করে। আমি এবার এসএসসি পরিক্ষার্থী। আমার জীবনের ইচ্ছা ছিল পড়াশুনা করে চাকুরি করে মানুষের বিপদে আপদে সাহায্য করব। আমি এসএসসি পাশ করলাম। এখন কলেজে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু কলেজে ভর্তি হতে হলে অনেক টাকার দরকার বাবার কাছে টাকা চাইতে গেলে বাবা বলে গরীবের এত পড়াশুনা করে কি হবে আমরা কি আর ঘুষ দিয়ে চাকুরি নিতে পারবো। থাক পড়াশুনা করার দরকার নাই। তার চেয়ে বাড়ির কাজ কর। সেইদিন আমার মন অনেক খারাপ হয়েছিল। মা কে বললাম এমনি জবাব পেলাম। মনে মনে ঠিক করলাম কলেজে আমি পড়াশুনা করবোই। মনে মনে ভাবি কী করব কার কাছে টাকা পাবো যাতে আমি কলেজে ভর্তি হতে পারি। একলা দুঃখ মনে রাস্তায় হাটতেছিলাম। হঠাৎ রাকির আসে বলল কিরে ভর্তি হয়েছিস আমি ভর্তি হয়ছি। শুনলাম পরশুদিন নাকি ভর্তির শেষ তারিখ। এখন আমি কী করব, মনে পড়ল গ্রামের প্রভাবশালী মানুষ মির্জা সাহেব এর কথা তিনি যখন চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছিলেন গ্রামের কেউ বিপদে পড়লে সে তাকে সাহায্য করবে বলেছিলেন। চলে গেলাম মির্জা সাহেব এর বাড়িতে বললাম মির্জা সাহেব আমার কিছু টাকার দরকার আপনি কী আমাকে কিছু টাকা দিতে পারবেন? মির্জা সাহেব টাকা দিতে রাজি হলেও বলল বাবা আমি তো বন্ধক ছাড়া টাকা কাউকে দেই না। তোমার কাছে এমন কোন জিনিস আছে যা আমার কাছে রেখে তুমি আমার কাছে টাকা নিতে পারো। আমার কাছে তেমন কোন কিছু নেই মির্জা সাহেব তখন বলল তাহলে আমার কাছে টাকা-কড়ি নেই। হঠাৎ সে বলল আমি যদি কামলা খেটে আপনার টাকা পরিশোধ করি তাহলে আমাকে টাকা দিবেন। মির্জা সাহের রাজি হলেন। টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম এবং সেই টাকা দিয়ে কিছু বই কিনলাম । এখন মির্জা সাহেব এর বাড়িতে কাজ করি, গরুর জন্য খড় কাটে, জমি চাষ করে আরো কত কী। মির্জা সাহেবের এক মেয়ে ছিল নাম তার রুমি দেখতে অনেক সুন্দরী তেমনি সৎ, নিষ্ঠাবান ও দয়ালু সে এবার কলেজে পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি কাজ শেষে সন্ধায় একা আমার বইগুলো পড়ি কিন্তু একা তেমন সবকিছু পড়তে পারি না। একদিন হঠাৎ মির্জা সাহেব এর মেয়ে রুমি আমার বইগুলো দেখে এবং আমাকে বলল তোমার যদি পড়তে সমস্যা হয় তাহলে আমার কাছে শিখিয়ে নিও। আমি কাজ করে একটু একটু করে রুমির কাছে শিখতে শিখতে কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করলাম। এবং মির্জা সাহেব এর কাছে যে টাকা নিয়েছিলাম তাও পরিশোধ হলো। এতদিন মির্জা সাহেব এর বাসায় সৎভাবে কাজ করায় মির্জা সাহেব খুশি হয়ে আমাকে কিছু টাকা উপহার দেয়। অপরদিকে তার মেয়ে আমাকে একদিন পড়াশুনা করার সময় আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং বলল আমি তোমাকে পছন্দ করি তুমি কী আমার প্রস্তাবে রাজি আছো, আমি বললাম না। পরদিন আবার তেমনি কথা, আমি তখন বললাম তুমি হচ্ছ মির্জা পরিবারের মেয়ে আর আমি গরীব পরিবারের সন্তান তোমার সাথে আমার মিল হবে না। সে বলল তুমি তো পড়াশুনা করছো চাকুরি করবে। আমি সেইদিন বলেছিলাম আচ্ছা আমি যদি কোনদিন চাকুরি পাই তাহলে তোমাকে বিয়ে করব। এখান থেকে তার সাথে ছিল আমার শেষ কথা। পরে আমি মির্জা বাড়ি থেকে চলে আসি। মির্জা সাহেব আমাকে খুশি হয়ে যে টাকা দিয়েছিল তা দিয়ে আমি অনার্স এ ভর্তি হই। পড়াশুনা খরচ জুটাতে আমি শহরে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি একটি কাজ জোগার করলাম এবং পড়াশুনা করতে লাগলাম। তখন এদেশ ছিল পাকিস্তান এর দখলে। পাকিস্তান এর সরকার ঘোষনা দেন উর্দুই হবে পাকিস্তান এর রাষ্ট্রভাষা। এ কথা শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে প্রতিবাদ মুখর হয়ে পড়ে। আমিও ছাত্র জনতার দলে যোগ দিলাম। তাঁরা প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজ-পথে মিছিল বাহির করে এবং একযোগে উত্তাল সুরে বলে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেই দশ জন করে মিছিল বাহির করার। পাকিস্তান এর সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেন। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ গুলি বর্ষণে বরকত, জব্বার, রফিক, সালাম সহ অনেকই শহিদ হন এবং আহত হয় কয়েকশ শিক্ষার্থী। ঐ মিছিলে আমিও ছিলাম বোমা বর্ষণের কারণে আমার শরীরের একটি পা হারাই এবং পঙ্গু হই। পরে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা হয়। পরে বাসায় ফিরে আসি এবং মির্জা সাহের এর মেয়ের সামনে যাই, আমার সব কথা শুনার পর সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় এবং সে আমাকে বলল আমার স্বামী ভাষাকে এতটা ভালোবাসতে পারে তাহলে আমাকে সে কত না ভালোবাসবে।(সংক্ষিপ্ত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন